পেডং
পেডং | |
---|---|
শহর | |
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৭°০৯′ উত্তর ৮৮°৩৭′ পূর্ব / ২৭.১৫° উত্তর ৮৮.৬২° পূর্ব | |
দেশ | India |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | কালিম্পং |
উচ্চতা | ১,২৪০ মিটার (৪,০৭০ ফুট) |
জনসংখ্যা (2001) | |
• মোট | ১৯,০০০ |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | নেপালি, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+5:30) |
পিন কোড | ৭৩৪ ৩১১ |
টেলিফোন কোড | ০৩৫৫২ |
যানবাহন নিবন্ধন | WB-78, 79 |
পেডং হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কালিম্পং জেলার একটি শহর।
ভূ-প্রকৃতি
[সম্পাদনা]পেডং কালিম্পং হতে ২০ কিলোমিটার পূর্বে লাভা যাওয়ার পথে ১,২৪০ মিটার (৪,০৭১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। পেডং শহরটি একটি শৈলশিরায় অবস্থিত যেখান থেকে কাঞ্চনজংঘা এবং হিমালয় পর্বতের দিগন্তবিস্তৃত দৃশ্য উপভোগ করা যায়। শহরটি দুটি অংশে বিভক্ত, উচ্চতর পেডং এবং নিম্নতর পেডং। পেডং ঐতিহাসিক রেশম পথে অবস্থিত যা কিনা জেলেপ লা গিরিপথ হয়ে ভারতকে লাসার সাথে সংযুক্ত করে।
স্থানসমূহ
[সম্পাদনা]পেডাংয়ের সন্নিকটে লেপচাদের দ্বারা ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত ঐতিহাসিক দুর্গ দামসং গাদির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এটি ভুটানের দুকপাদের সাথে দীর্ঘকালীন বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। পরবর্তীকালে, এটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনীকে প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ-ভুটান যুদ্ধের পরে দুর্গটি ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ে। দামসাং দুর্গ (দামসং গাদি) পুরো দার্জিলিং জেলার একমাত্র দুর্গ। এটি সর্বশেষ লেপচা রাজা- গ্যাবো আচুকের বাসস্থান ছিল কারণ লেপচারা এই জায়গার আসল আদি অধিবাসী।
এই শহরের আর একটি মূল আকর্ষণ হল ক্রস হিল, যা কিনা পুরোহিত ফাদার অগাস্টিন ডেসগডিনস ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতে যাওয়ার পথে স্থাপন করেছিলেন। তিব্বত মিশনে প্রচুর প্রচারক প্রাণ হারিয়েছেন বা কখনও তিব্বত থেকে আর ফিরে আসেননি। তাদের স্মরণে ফাদার অগাস্টিন ডেসগডিনস এই আশা নিয়ে তিব্বত সরাসরি দৃষ্টিগোচর হয় এমন একটি স্থানে একটি ক্রস স্থাপন করেছিলেন যে কোনও দিন প্রচারকেরা হয়তো ফিরে আসতে পারেন। এটির অলৌকিক ক্ষমতা আছে বলে মনে করা হয় এবং এটি স্থানীয় খ্রিস্টানদের নিকট একটি তীর্থস্থান। ক্রস হিল এমন একটি স্থানে অবস্থিত যেখান থেকে মুখোমুখি পর্বতগুলির দুর্দান্ত দৃশ্য অবলোকন করা যায়। এখান থেকে তিব্বত এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনা সীমান্তের রূপ এক ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। এটি নিখুঁত সূর্যাস্ত পরিদর্শনের একটি উত্তম স্থান।
সাংচেন দোর্জি মঠটি পেডাং-কালিম্পং অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন মঠ এবং এটি ভুটানি শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। এই মঠটি ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মঠটি এই স্থানের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির রূপ সম্পর্কে ঐতিহাসিক অন্তর্দৃষ্টি সরবরাহ করে। এর প্রধান কক্ষের অভ্যন্তরীণ দেয়ালে সাংচেন দোর্জি গুম্বা নামে খ্যাত এক বিশিষ্টজনের দেয়ালচিত্র অঙ্কিত রয়েছে যা তন্ত্রিক বৌদ্ধধর্মকে চিত্রিত করে। গুম্ফা ডান্স (ছায়াম নাচ) বা বৌদ্ধ মুখোশ-নৃত্য এখানে প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয়। এটি এখন শবদ্রুং রিম্পোচের (ভুটানের ধর্মরাজ নামে পরিচিত) কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ শবদ্রুং রিম্পোচে পেডং-এ স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং কয়েক বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর মানব রূপটি পেডং-এ সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং একটি শুভ দিনে একটি স্তূপে আবদ্ধ করা হবে। এই স্থানটি ভুটানি এবং বৌদ্ধ ধর্মের দ্রুকপা খারগু ধারার অন্যান্য অনুসারীদের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান পরিণত হয়েছে।
পেডং শহরের নিকটবর্তী গ্রামগুলো হলো সাক্যং, কাস্যং, দালেপ, কাগেই, উচ্চতর মেঞ্চু এবং নিম্নতর মেঞ্চু।
মারাত্মক অগ্নি দুর্ঘটনা, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫
[সম্পাদনা]২৮ জানুয়ারী ২০১৫ মধ্যরাতে পেডংয়ের কেন্দ্রস্থলে একটি বড় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুনে প্রায় ১৭ টি ঘর পুরোপুরি পুড়ে গেছে।[১] স্থানীয় জনগণ এবং সেনাবাহিনী কাছাকাছি শহর কালিম্পং এবং রাঙ্গপো থেকে অগ্নিনির্গমন পরিষেবা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একত্রে কাজ করেছিল যার অন্যথায় হলে পেডংয়ের বেশিরভাগ অংশ আগুনের লেলিহান শিক্ষায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যেত। আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি একাধিক কোটি টাকা, তবে দুর্ভাগ্যজনক এ ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পেডংয়ের স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার অভিযানে মিঃ লোবস্যাং এবং দাওয়া ভূটিয়ার ভাতৃদ্বয়ের বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রশংসা করেছেন। ঘটনার পরে, কাছাকাছি ও দূরবর্তী স্থানের লোকেরা এই শহরটিতে সংহতি জানাতে এবং সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে সাহায্য-সহায়তা দেওয়ার জন্য পরিদর্শন করেছিল। অনেক এনজিওও সম্ভাব্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]সেন্ট জর্জ'স উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলো পেডংয়ে অবস্থিত একটি খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল এবং এই অঞ্চলে অবস্থিত অন্যান্য আবাসিক স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর পাশাপাশি আরও রয়েছে সেন্ট জ্যাভিয়ার'স বিদ্যালয়, টেন্ডার বাড্স একাডেমী, গ্রেস ইংলিশ স্কুল। এই শহরে অনেক নার্সারি স্কুলও রয়েছে।
থাকার ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]স্বদেশী পর্যটকদের নিকট পেডং একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। তা ছাড়াও, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশী পর্যটক পেডংয়ের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো ভ্রমণ করতে আসেন, বিশেষত যেসকল স্থান সমূহ সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। পেডংয়ে স্বল্প খরচে ও মধ্যম খরচে থাকার জন্য নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।
ভ্রমণ
[সম্পাদনা]শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং হয়ে সড়কপথে ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৩ ঘণ্টায় পেডং পৌঁছানো সম্ভব।
উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত
[সম্পাদনা]পেডং পক্ষীকুলের বৈচিত্র সমৃদ্ধ একটি স্থান। হিমালয় অঞ্চলের এবং সমতল ভূমির বিভিন্ন পাখি প্রজাতি পেডং-য়ে বিচরণ করতে দেখা যায়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Lawall, Mark L.। Houses of Ill Repute। Philadelphia: University of Pennsylvania Press। আইএসবিএন 9780812292695।